বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে সার্কুলার অর্থনীতি এবং টেকসই উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করতে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল নেদারল্যান্ডসে সার্কুলার টেক্সটাইল ট্রেড মিশনে অংশ নিচ্ছে। ‘টুগেদার ফর এ সার্কুলার ফ্যাশন টুমোরো’, এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত এই মিশনটি ৮ থেকে শুরু হয়েছে এবং ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।
এই মিশনটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি (আরভিও) এবং ঢাকায় অবস্থিত নেদারল্যান্ডস দূতাবাস, যার সাথে নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করেছে বিজিএমইএ। এর মূল লক্ষ্য হলো রিসাইক্লিং, টেক্সটাইল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং উন্নত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নতুন ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করা, পাশাপাশি প্রযুক্তি বিনিময় বাড়ানো—যাতে করে সার্কুলার টেক্সটাইল অর্থনীতির দিকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া যায়।
বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি ভিদিয়া অমৃত খানের নেতৃত্বে এই প্রতিনিধিদলে রয়েছেন বিজিএমইএ এর পরিচালক শাহ রাঈদ চৌধুরী, পরিচালক জোয়ারদার মোহাম্মদ হোসনে কমার আলম, পরিচালক আসেফ কামাল পাশা এবং পরিচালক সাকিফ আহমেদ সালাম। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের পোশাক ও বস্ত্র খাতের শীর্ষস্থানীয় ম্যানুফ্যাকচারাররা ও রিসাইক্লাররা।
বাংলাদেশের জন্য এই বাণিজ্য মিশনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ দেশের পোশাক শিল্প বৈশ্বিক সার্কুলারিটি বিষয়ক সর্বোত্তম অনুশীলনগুলো গ্রহণ, উদ্ভাবনী প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহার এবং বিশ্বব্যাপী সার্কুলারিটির চাহিদাগুলোর সাথে নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে তোলার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করছে এবং সাসটেইনেবিলিটির প্রসারে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে চলেছে।
চার দিনের এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে, প্রতিনিধিদলটি সার্কুলার নীতি, অর্থায়ন ব্যবস্থাপনা এবং প্রযুক্তি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছে। তারা ব্রাইটফাইবার ইনসাইড, উইল্যান্ড টেক্সটাইলস, স্যাক্সেল এবং ফ্রাঙ্কেনহুইস এর মতো শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোও পরিদর্শন করেছে, যারা টেক্সটাইল রিসাইক্লিং এবং ক্লোজড-লুপ সিস্টেমে তাদের যুগান্তকারী অবদানের জন্য সুপরিচিত।
এছাড়াও প্রতিনিধিদলটি স্যাকশন ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেসের সার্কুলার টেক্সটাইল ল্যাব পরিদর্শন এবং রিসাইকেলড সুতা ও কাপড়ের জন্য উন্নত প্রোটোটাইপিং সুবিধাগুলো সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেছে। এই পরিদর্শনটি বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল শিল্পে এর ব্যবহারিক প্রয়োগ সম্পর্কে মূল্যবান ধারণা প্রদান করে।
প্রতিনিধিদলটি ‘সার্কুলার টেক্সটাইল ডেইজ’ নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় প্ল্যাটফর্মেও অংশগ্রহণ করে। এই প্ল্যাটফর্মে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড, রিসাইক্লার, উদ্ভাবক এবং প্রযুক্তি সরবরাহকারীরা তাদের সার্কুলার মডেল, ট্রেসেবিলিটি এবং টেকসই উৎপাদনের বিভিন্ন সমাধান তুলে ধরেন। এই আয়োজনে নেটওয়ার্কিং, ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন (ম্যাচমেকিং) এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের উদ্ভাবনগুলো তুলে ধরার অসাধারণ সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এই মিশনে বিজিএমইএ’র অংশগ্রহনের মাধ্যমে বিজিএমইএ এর 'সাসটেইনেবিলিটি ভিশন ২০৩০'-এর প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেছে। এই রূপকল্পে সার্কুলারিটি, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং পরিবেশবান্ধব অর্থনীতির দিকে রূপান্তরকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
এই মিশনে অংশগ্রহণকারী শীর্ষস্থানীয় বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে এশিয়ান অ্যাপারেলস লিমিটেড, সার্কুলার ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সাইক্লো, দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড, ইভিটেক্স ড্রেস শার্ট লিমিটেড, ফ্লোরেন্স গ্রুপ, খেতান ট্রেডিং, মাতিন স্পিনিং মিলস পিএলসি, ওশান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, রিকভার, রিসাইকেল-র্য লিমিটেড, সারাজ ফাইবার টেক লিমিটেড, সেটারা গ্রুপ এবং রিভার্স রিসোর্সেস।