বিদেশ থেকে দেশে ফেরা যাত্রীদের জন্য ব্যাগেজ রুলে বড় পরিবর্তন এনেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
মঙ্গলবার (৩ জুন) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, এই বিধিমালা অপর্যটক যাত্রী ব্যাগেজ বিধিমালা, ২০২৫ নামে অভিহিত হবে। এই বিধিমালা পর্যটক যাত্রী, প্রিভিলেজড পার্সন, ট্রানজিট যাত্রী ও ক্রু এবং উপকূলীয় পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এই বিধিমালা সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার ৩০ দিন পর থেকে কার্যকর হবে।
আকাশ এবং জলপথে আগত যাত্রীর শুল্ক ও কর সুবিধা
আকাশ এবং জলপথে আগত ১২ বছর বা তার বেশি বয়সি যাত্রীর সঙ্গে আনা হাতব্যাগ, কেবিন ব্যাগ বা অন্য কোনো উপায়ে আনা মোট ৬৫ কিলোগ্রাম ওজনের অতিরিক্ত না, এই ধরনের ব্যাগেজ সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই খালাসযোগ্য হবে। এছাড়া উপবিধি (১) এ উল্লিখিত ব্যাগেজের অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব ৩৫ কিলোগ্রাম ওজনের আনা পরিধেয় বস্ত্র, ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সামগ্রী, বই, সাময়িকী এবং পড়াশোনা সামগ্রী সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই খালাসযোগ্য হবে।
১২ বছর বা তার কম বয়সের যাত্রীর ক্ষেত্রে অনধিক ৪০ কিলোগ্রাম ওজনের একটি কার্টন, ব্যাগ বা অন্য উপায়ে আনা ব্যক্তিগত ব্যাগেজ সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই খালাসযোগ্য হবে। তবে বর্ণিত এই সুবিধা ব্যতীত অন্য কোনো প্রকার সুবিধা ১২ বছরের কম বয়সী যাত্রী পাবেন না। তবে স্বর্ণবার বা স্বর্ণপিন্ড, রুপার বার বা রৌপ্যপিন্ড, মদ বা মদ জাতীয় পানীয় এবং স্বর্ণালংকার বা রুপার অলংকার, ১ কার্টন (২০০ শলাকা) সিগারেট আমদানির সুবিধা ১২ বছরের কম বয়সী যাত্রীর জন্য প্রযোজ্য হবে না।
আন-অ্যাকোম্পানিড ব্যাগেজের ক্ষেত্রে ফরমে ঘোষণা দিয়ে ও আমদানির সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে এবং আমদানি নীতি আদেশের শর্ত পরিপালন করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ সাপেক্ষে খালাস করা যাবে। তবে উক্ত আন-অ্যাকোম্পানিড ব্যাগেজ খালাসের সময় ব্যাগেজ ঘোষণা ফরমের একটি অনুলিপি সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কর্মকর্তার কাছে দাখিল করতে হবে। এছাড়া যাত্রীর সঙ্গে বুকিং করা ব্যাগেজ কোনো কারণে যাত্রীর সঙ্গে না আসলে উক্ত ব্যাগেজ এইভাবে খালাস করা হবে। যেন উক্ত ব্যাগেজ যাত্রীর সঙ্গে আনা হয়েছে।
এই বিধিতে ভিন্নভাবে যাই কিছুই থাকুক না কেন, একজন যাত্রী তফসিল-৩ এ উল্লিখিত পণ্যের প্রত্যেকটির একটি করে পণ্য সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়া এবং তফসিল-২ এ উল্লিখিত পণ্যের প্রত্যেকটির একটি করে পণ্য উক্ত তফসিলে উল্লিখিত শুল্ক ও কর পরিশোধ সাপেক্ষে আমদানি করতে পারবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। তবে একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ২টি ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও প্রতি বছরে মাত্র একবার ১টি নতুন মোবাইল ফোন শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই আমদানি করতে পারবেন। তবে এর অতিরিক্ত আমদানি করা মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে বিধি ১০ ও অন্যান্য প্রচলিত বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে।
এছাড়া একজন বিদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী ১ লিটার পর্যন্ত মদ বা মদ্য জাতীয় পানীয় (যেমন-স্পিরিট, বিয়ার, ইত্যাদি) সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ব্যতিরেকে আমদানি করতে পারবে। তবে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী কোনো যাত্রী মদ বা মদ্য জাতীয় পানীয় আমদানি করতে পারবেন না।
কোনো যাত্রী তফসিল-২ এবং তফসিল-৩ এ উল্লিখিত পণ্য বিদেশ থেকে সঙ্গে না এনে থাকলে উক্ত পণ্য তফসিল-৪ এ বিধৃত ফরমে উল্লেখ করে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সিটি সেলস সেন্টার থেকে তার আগমনের ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ক্রয় করতে পারবেন। একজন যাত্রী তার পেশাগত কাজে ব্যবহার্য এবং সহজে বহনযোগ্য যন্ত্রপাতি সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই আমদানি করতে পারবেন।
এছাড়া এখন থেকে একজন যাত্রী পরিহিত অবস্থায় থাকুক বা না থাকুক, সর্বমোট একশত গ্রাম ওজনের স্বর্ণালংকার অথবা ২ শত গ্রাম ওজনের রুপার অলংকার (যেখানে একই প্রকার অলংকার ১২টির অধিক নয়) ঘোষণা দিয়ে ও সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ব্যতিরেকে প্রতি বছরে একবার আমদানি করতে পারবেন।
একজন যাত্রী বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় ঘোষণা দিয়ে সর্বোচ্চ ১১৭ গ্রাম বা ১০ তোলা ওজনের স্বর্ণবার বা স্বর্ণপিণ্ড অথবা ২৩৪ গ্রাম বা ২০ তোলা ওজনের রুপার বার বা রৌপ্যপিণ্ড সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ সাপেক্ষে প্রতি বছরে এক বার আমদানি করতে পারবেন।
তবে উল্লেখিত পরিমাণের অতিরিক্ত যে কোনো পরিমাণ স্বর্ণবার বা স্বর্ণপিন্ড অথবা রুপার বার বা রৌপ্যপিণ্ড আনলে বা যে কোনো পরিমাণ স্বর্ণবার বা স্বর্ণপিণ্ড অথবা রুপার বার বা রৌপ্যপিণ্ড লুকায়িত অবস্থায় আনলে সেগুলো আইন অনুযায়ী বাজেয়াপ্ত করা হবে।
স্থল পথে আগত যাত্রীর জন্য সুবিধা
বিদেশে অবস্থানের মেয়াদ নির্বিশেষে স্থলপথে আসা একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ৪শত মার্কিন ডলার মূল্যের ব্যাগেজ সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই আমদানি করতে পারবেন। তবে এ ধরনের সুবিধা একজন যাত্রী এক বছরে ৩ বারের বেশি পাবেন না।
অসুস্থ, পঙ্গু ও বৃদ্ধ যাত্রীর জন্য সুবিধা
আকাশপথ, জলপথ বা স্থলপথে আসা একজন অসুস্থ, পঙ্গু অথবা বৃদ্ধ যাত্রীর ব্যবহৃত চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও হুইল চেয়ার সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই খালাস করা যাবে।
ক্রু, নাবিক এবং অন্যান্যদের জন্য সুবিধা
পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বিদেশ থেকে আসা বাংলাদেশি এয়ারলাইনসে কর্তব্যরত কোনো বাংলাদেশি ক্রু বা কর্মকর্তা অথবা বাংলাদেশের কোনো বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনাকারী কোনো বিদেশি এয়ারলাইনসে কর্তব্যরত কোনো বাংলাদেশি ক্রু বা কর্মকর্তা সর্বোচ্চ ৩শত মার্কিন ডলার মূল্যের ব্যাগেজ সব ধরনের শুষ্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই আমদানি করতে পারবেন।
বিদেশি সমুদ্রবন্দর থেকে আসা কোনো জাহাজের বাংলাদেশি নাবিক বা কর্মকর্তা সর্বোচ্চ ৩শত মার্কিন ডলার মূল্যের ব্যাগেজ সব ধরনের শুষ্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই আমদানি করতে পারবেন। উপবিধি (২) এ উল্লিখিত নাবিক বা কর্মকর্তা সাইন অফ করলে তিনি অনূর্ধ্ব ২ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের ব্যাগেজ আরোপযোগ্য সকল প্রকার শুষ্ক ও কর পরিশোধ করে আমদানি করতে পারবেন।
বিদেশ থেকে আসা যাত্রীবাহী বাসের চালক ও স্টুয়ার্ডরা (হেলপার বা অ্যাসিস্টেন্ট) পরিধেয় বস্ত্র, বিছানা (বেডিং) ও রান্না করা খাদ্যসামগ্রী এবং সর্বোচ্চ ৫০ মার্কিন ডলার মূল্যের ব্যক্তিগত ও গৃহস্থালি পণ্য সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়াই আমদানি করতে পারবেন।
গ্রিন এবং রেড চ্যানেল ব্যবহার
কোনো যাত্রী শুষ্ক ও কর আরোপযোগ্য পণ্য বহন না করলে এবং বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল যদি থাকে তবে তিনি সেটি ব্যবহার করতে পারবেন। গ্রিন চ্যানেল অতিক্রমকারী সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ যাত্রীর ব্যাগেজ দৈবচয়নের ভিত্তিতে কাস্টমস কর্মকর্তা কর্তৃক স্ক্যানিং ও পরীক্ষা করা যাবে। উপবিধি (১) ও (২) এ যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো কাস্টমস কর্মকর্তা, যুক্তিসংগত কারণে বা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গ্রিন চ্যানেল অতিক্রমকারী যে কোনো যাত্রীর ব্যাগেজ স্ক্যানিং ও পরীক্ষা করতে পারবেন।
সকল যাত্রীর জন্য কাস্টমস ঘোষণাপত্রের বিধান
বিদেশ থেকে আসা যাত্রীকে তফসিল-১ এ বর্ণিত ব্যাগেজ ঘোষণা ফরম পূরণ করে অথবা অনলাইনে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করতে হবে। আন-অ্যাকোম্পানিড ব্যাগেজের ক্ষেত্রে কাস্টমস হল বা কাস্টমস এলাকা ত্যাগ করার আগেই যাত্রী কর্তৃক কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে তফসিল-১ এ বর্ণিত ফরম পূরণ করে ব্যাগেজ ঘোষণা করতে হবে।
তবে ভুলবশত অথবা অন্য কোনো অনিবার্য কারণে, উপবিধি (১) ও উপবিধি (২) এর বিধান অনুযায়ী কোনো যাত্রী ব্যাগেজ ঘোষণা না করতে পারলে, তার দেশে আসার ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার অব কাস্টমসের নিচে না এমন কাস্টমস কর্মকর্তার কাছে তফসিল-১ এ বর্ণিত ফরম পূরণ করে তিনি ব্যাগেজ ঘোষণা করতে পারবেন।
একজন যাত্রী ১ বছরে মাত্র একবার আন-অ্যাকোম্পানিড ব্যাগেজ আনতে পারবেন জানিয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যাত্রী যে দেশ থেকে যাত্রা আরম্ভ করবেন, শুধু সেই দেশ থেকেই আন-অ্যাকোম্পানিড ব্যাগেজ (যদি থাকে) আনতে পারবেন। যাত্রীকে ব্যাগেজ ঘোষণা দাখিল করার সময় আন-অ্যাকোম্পানিড ব্যাগেজ পাঠানোর জন্য প্রদত্ত বুকিংয়ের প্রমাণক দলিলাদি ঘোষণাপত্রের সঙ্গে উপস্থাপন করতে হবে।
মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে অব্যাহতি
এই বিধিমালা যা কিছুই থাকুক না কেনো, কোনো বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে মৃত্যুবরণ করলে তার ব্যাগেজ সব ধরনের শুল্ক ও কর দেয়া থেকে অব্যাহতি পাবে।
তবে ব্যাগেজ সুবিধার অতিরিক্ত পরিমাণ পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এই বিধিমালার অন্যান্য বিধানে যাই কিছু থাকুক না কেনো, কোনো যাত্রী তফসিল-২ এবং তফসিল-৩ এ উল্লিখিত পণ্যের অতিরিক্ত বা ভিন্ন কোনো পণ্য, আমদানি নীতি আদেশ বা অন্য কোনো আইনের অধীন নিয়ন্ত্রিত বা নিষিদ্ধ পণ্য ব্যতীত, আমদানি করিলে প্রধান আমদানি ও রফতানি নিয়ন্ত্রকের ছাড়পত্র উপস্থাপন সাপেক্ষে, আইন অনুযায়ী ন্যায়-নির্ণয়নপূর্বক প্রদেয় সব শুল্ক ও কর, অর্থদণ্ড ও জরিমানা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, পরিশোধ সাপেক্ষে খালাস করতে পারবেন।