News update
  • Arab-Islamic Summit Warns Israel Attacks Threaten Ties     |     
  • South-South Cooperation: Building Innovation and Solidarity     |     
  • Consensus must; polls to be a grand festival: Prof Yunus     |     
  • Salahuddin sees security risks if polls miss February deadline     |     
  • Qatar denounces Israel before major summit over Doha attack      |     

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে মার্কিন রাজনীতিতে তোলপাড়

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক গনতন্ত্র 2024-12-11, 9:34am

675074aa33060d61e3ed4b5d9b3334c942e4d6ec417c1308-91304ab816c94671237383a3768d0e6f1733888095.jpg




২০২০ সালে জো বাইডেনের কাছে হারলেও বছর চারেক পর এসে কোটি কোটি মার্কিনির সমর্থনে ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে চমক দেখালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ইতিহাসে নিশ্চিতভাবেই এটি সবচেয়ে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন। তার এই ফিরে আসা মার্কিন রাজনীতিতে তো বটেই, বৈশ্বিক রাজনীতিতেও গভীর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ইতিহাস পরিবর্তন করে এবার হয়তো হোয়াইট হাউসের গদিতে এক নারী প্রেসিডেন্টকে দেখা যাবে- এমন আশায় ছিল বিশ্বের বহু মানুষ। তবে গেল ৫ নভেম্বর সেই আশা ভঙ্গ করে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একবার হেরে গিয়ে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন তিনি। এর মধ্যদিয়ে ১৩২ বছরের রেকর্ড ভাঙলেন রিপাবলিকান এই প্রার্থী।

এবার দিয়ে তিনবার নির্বাচনে অংশ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্যে দুবার জয় পেয়েছেন এই রিপাবলিকান প্রার্থী। চার বছর আগে জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হলেও এবার ট্রাম্পের অসাধারণ প্রত্যাবর্তন দেখেছে সারাবিশ্ব। 

২০১৫ সালের জুন মাসে ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দেন। প্রচারণায় নিজের সম্পদ ও ব্যবসায়িক সাফল্য জাহির করতেন বারবার। তিনি মেক্সিকোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক, অপরাধ ও ধর্ষকদের পাঠানোর অভিযোগ তোলেন এবং দাবি করেন সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের খরচ ওই দেশকেই দিতে হবে।

এরপর মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন-কে তার প্রচারাভিযানের স্লোগান বানিয়ে সহজেই রিপাবলিকান পার্টির অন্যান্য সদস্যদের পেছনে ফেলে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ট্রাম্প।

এরপর ২০২০-এ জো বাইডেনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। ২০২৪- এ আবার তিনি লড়তে নামেন কমলা হ্যারিসের সঙ্গে। ট্রাম্পের এবারের নির্বাচনি প্রচারণার পর্বকে ইতিহাসের অংশ বললে কম বলা হবে। প্রচারণার সময় ট্রাম্পকে দুই দফা হত্যা চেষ্টা হয়। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন নির্বাচনের কয়েক মাস আগে নাম সরিয়ে নেন।

এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেই অঙ্গরাজ্যগুলোতে হয়েছে, সেসব অঙ্গরাজ্যে আমেরিকানরা ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ভোটারদের অনেকেই ট্রাম্পকে ভোট দেয়ার পেছনে অর্থনীতি ও অভিবাসনের মত ইস্যুগুলোকে সামনে রাখছেন।

২০২০ সালের নির্বাচনে হারের পর ট্রাম্প নির্বাচনে জালিয়াতির ভুয়া অভিযোগ তোলেন। এমনকি তার উসকানিতে উগ্র সমর্থকেরা ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল হিল) রক্তক্ষয়ী হামলা চালিয়েছিলেন।

পরবর্তীতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলা হয়। একটি ফৌজদারি মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত পর্যন্ত হন। এত কিছু সত্ত্বেও ট্রাম্প এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় ব্যবধানে কমলা হ্যারিসকে হারিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়া একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের আভাস দেয়। বিশেষ করে, অর্থনীতি ও অভিবাসন নিয়ে উদ্বিগ্ন ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের শক্তিশালী আবেদন দেখা গেছে এবার।

বিবিসির এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পের বক্তৃতাগুলো ছিল উসকানিমূলক ও প্রতিশোধপরায়ণ। তবে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে তার মনোযোগ অনেক ভোটারকেই অনুপ্রাণিত করেছিল।

নির্বাচনী প্রচারণার সমাবেশগুলোতে ট্রাম্প একটি প্রশ্ন প্রায়ই করেছেন। ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বারবার প্রশ্ন রেখেছেন ‘আপনি কি দুই বছর আগের চেয়ে এখন ভালো আছেন?’

ট্রাম্পের এই প্রশ্নটি যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ভোটারের মনেই ভাবনার উদ্রেক করেছিল। বিশেষ করে যারা ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনীতিতে করোনা মহামারির প্রভাবে হতাশ ছিলেন। তারা তাদের আর্থিক সংগ্রামের জন্য একদিকে যেমন বাইডেন প্রশাসনকে দায়ী করেছেন, অন্যদিকে অনুভব করেছেন-ট্রাম্পের নীতিগুলো তাদের জীবিকার জন্য আরও ভালো ছিল।

অভিবাসন ইস্যুও এবার ট্রাম্পকে জেতাতে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর ভোটারদের মাঝে অবৈধ অভিবাসন নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ রয়েছে। বাইডেনের আমলে এই উদ্বেগ আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্প বরাবরই কড়া ভাষায় কথা বলে এসেছেন। অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করার বিষয়টি তার নির্বাচনী প্রচারণার অন্যতম কৌশল ছিল।

ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগানটিও এবার ভোটারদের গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। বাইডেন প্রশাসনের বিদেশে পাঠানো মার্কিন সাহায্য নিয়ে বিশেষ করে ইউক্রেনকে বিপুল সাহায্য ও সমর্থন দেয়ার বিষয়ে অসংখ্য আমেরিকান হতাশ ছিলেন। তারা বিশ্বাস করেন, বিদেশের বদলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে আরও বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত।

ভোটারদের পরিবর্তনের এই আকাঙ্ক্ষাই ট্রাম্পের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কারণ অনেক ভোটার মনে করেছিলেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের অধীনে বাইডেনের বিদেশ নিয়ে মাথা ঘামানোর নীতি একই রকম থেকে যাবে।

এবারের নির্বাচনটি মার্কিন ভোটারদের সামনে দুটি দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছিল। একটি হলো, ট্রাম্পের ‘আমেরিকাকে আবার মহান করার’ প্রতিশ্রুতি। আর দ্বিতীয়টি হলো, ট্রাম্পের নেতৃত্বে গণতন্ত্র হুমকির বিষয়ে কমলা হ্যারিসের সতর্কতা। এ অবস্থায় ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব উভয়ই তার নীতির ফলাফলের মুখোমুখি হবে।

এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক আন্দ্রা গিলেসপির মতে, বাইডেন প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থা হারানো, জনপ্রিয়তার অভাব, প্রচারণায় সময় স্বল্পতা এবং নারী প্রেসিডেন্ট নিয়ে মার্কিনিদের মধ্যে আস্থার অভাব, এ বিষয়গুলোই কমলা হ্যারিসের পরাজয়ের মূল কারণ।

এছাড়া বাইডেন প্রশাসনের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় কমলা হ্যারিসের ওপর বিশ্বাস হারিয়েছেন সাধারণ জনগণ। অপরদিকে ট্রাম্প দেশের অর্থনীতির হাল শক্ত হাতে ধরবেন বলে আশা মার্কিনিদের। সময় সংবাদ।