News update
  • Experts see Tarique's political future on optimistic note     |     
  • UN Chief Urges Leaders to Curb Warming, Protect Planet     |     
  • Tk 3.38cr Project to Restore Sonadia’s Biodiversity     |     
  • Global Emissions Fall Slowly, Experts Urge Renewables Push     |     
  • Hurricane Melissa: UN Appeals $74M to Aid 2.2M in Cuba     |     

উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সিরিয়ার শাসনভার যেভাবে দুই যুগ সামলেছেন বাশার

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক গনতন্ত্র 2024-12-08, 3:17pm

img_20241208_151306-7dd7525a7705acd7cfad9b30b307c2751733649477.jpg




তালেবান সংশ্লিষ্ট বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) আক্রমণের মুখে সিরিয়া ছেড়ে পালিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। তার নিয়োগকৃত প্রধানমন্ত্রীও ইতোমধ্যে হাত মিলিয়েছেন বিদ্রোহীদের সঙ্গে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও তাই নিশ্চিতভাবেই বলা চলে, অবসান হয়েছে আসাদের ২৪ বছরের শাসনামল।

সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সামনে কোনোরকম প্রতিরোধই গড়তে পারেনি কিংবা গড়েনি আসাদের সেনাবাহিনী। ফলে, একরকম বিনা বাধায় সিরিয়ার দখল নিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন বিদ্রোহীরা। অথচ, ১০ দিন আগেও কেউ কল্পনা করেনি এভাবে তাসের ঘরের মতোন ভেঙে পড়বে আসাদের মসনদ। বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ ও রাশিয়ার হাত গুটিয়ে নেওয়ার পর সিরিয়ার সেনাবাহিনীর নিষ্ক্রিয়তাতেই সম্ভব হয়েছে এমনটা।

কারণ, সিরিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্তদের বেশিরভাগকেই যোগদান করানো হয়েছিল জোরপূর্বকভাবে। এমনকি, তাদের নিয়মিত বেতন-ভাতাও দেওয়া হতো না। ফলে, দেশ কিংবা প্রেসিডেন্টের জন্য তেমন একটা নিবেদিত ছিলেন না সিরিয়ার সেনা সদস্যরা। মূলত, লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ এবং ইরান ও রাশিয়ার সমর্থনই ছিল বাশার আল আসাদের শক্তির উৎস।

তার বাবা হাফিজ আল-আসাদকে বলা হয় ‘আধুনিক সিরিয়া’র রূপকার। ১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করা হাফিজ ছিলেন আরব সোশ্যালিস্ট বাথ পার্টির নেতা। ১৯৪৬ সালে দলটির রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। ১৯৫৫ সালে বিমানবাহিনীর পাইলট হিসেবে যোগ দেন হাফিজ। বাথ পার্টিকে শক্তিশালী করতে তার ভূমিকা ছিল। ১৯৬৬ সালে দেশটিতে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে বাথ পার্টি; প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন হাফিজ। রাজনৈতিকভাবে বেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে নিজ রাজনৈতিক গুরু ও সিরীয় নেতা সালাহ আল-জাদিদকে সরাতে ঘটান আরেকটি অভ্যুত্থান। পরের বছরই সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন তিনি।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বড় এক খেলোয়াড় ছিলেন হাফিজ আল-আসাদ। ১৯৭৩ সালে মিসর-ইসরায়েল যুদ্ধে তিনি মুসলিম মিত্র কায়রোর পক্ষে অবস্থান নেন। প্রায় দুই দশক পর ১৯৯১ সালে তিনিই আবার ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। ইসরায়েলের দখলে থাকা গোলান মালভূমি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় ভূমিকা রাখেন।

ইরাকের নেতা সাদ্দাম হোসেনকে ‘দীর্ঘদিনের শত্রু’ মনে করতেন হাফিজ। ১৯৯০-৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে সিরিয়া বাগদাদের বিপক্ষে ছিল। এ যুদ্ধে পশ্চিমা জোটকে সমর্থন দিয়েছিলেন তিনি।

টানা ২৯ বছর ক্ষমতা সামলে ২০০০ সালের ১০ জুন দামেস্কে মারা যান হাফিজ। সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের শাসনের সূচনা হয় এর মধ্য দিয়ে। ওই বছরের ১৭ জুলাই প্রেসিডেন্ট পদে বসেন হাফিজের ছোট ছেলে বাশার আল-আসাদ। যদিও ক্ষমতা নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না তার। হতে চেয়েছিলেন চিকিৎসক। চক্ষুবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছেন দামেস্ক ইউনিভার্সিটি থেকে। দক্ষতা অর্জন করেন ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায়। উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। কিন্তু, ১৯৯৪ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় বড় ভাই বাসেল আল-আসাদের মৃত্যু জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় বাশারের। বাবার নির্দেশে দেশে ফেরেন। এরপর সিরিয়ায় সামরিক বিষয়ে পড়াশোনা শুরু হয় তার। রাজনৈতিক বিষয়ে হাতে-কলমে জ্ঞানার্জন করতে থাকেন বাবার কাছ থেকেই।

বলা যায়, বাশারকে তার বাবাই একজন শাসক হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। ২০০০ সালে বাবার মৃত্যুর পর মাত্র ৩৪ বছর বয়সে দেশের শাসনভার নিজের কাঁধে তুলে নেন তিনি।

শাসনামলের শুরুর দিকে সংস্কারে মন দেন বাশার আল আসাদ । প্রশাসনিক-রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক উদারীকরণের পথে হাঁটেন। এ ক্ষেত্রে বাবার আমলের বেশ কিছু কঠোর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেন তিনি। বাবার মতো পশ্চিমা ঘেঁষা না থেকে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরোধিতা করেন।

হাফিজ আল-আসাদ তার দীর্ঘদিনের শাসনে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিজের পছন্দের ও বিশ্বস্ত লোকদের নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাদের মাধ্যমে ২৯ বছর দেশ শাসন করেছেন তিনি। বাশার ক্ষমতায় এসে এ পদগুলোয় পরিবর্তন আনতে শুরু করেন। বিশেষ করে নিরাপত্তা সংস্থা ও সামরিক বাহিনীতে রদবদল করেন। আস্থাভাজন ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ সব পদে বসিয়ে প্রশাসনের লাগাম শুরু থেকেই নিজের হাতে রাখেন বাশার।

অবশ্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও শুরুর দিকে বাশার আল আসাদকে সাধারণ জীবন কাটাতে দেখা যেত। ব্যক্তিগত ড্রাইভারও ছিল না তার, গাড়ি চালাতেন নিজেই। ব্রিটিশ-সিরীয় স্ত্রী আসমাকে সঙ্গে নিয়ে রেস্তোরাঁয় নৈশভোজে যেতেন। পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত ও আধুনিক মানসিকতার তরুণ বাশার সিরীয়দের কাছে অনেক পছন্দের মানুষ ছিলেন।

পরিস্থিতি পাল্টে যায় আরব বসন্তের ধাক্কায়

তবে পরিস্থিতি ক্রমেই বদলে যায়। সংস্কারকের ভূমিকা থেকে কর্তৃত্ববাদী শাসক হয়ে উঠতে শুরু করেন বাশার। বিরোধী মত দমনে তার কুখ্যাতি ছড়াতে থাকে। সিরিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয় অনেক সরকারবিরোধী শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবীকে। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা গণতন্ত্র সিরিয়ার জন্য নয়।’

বলা যায়, এখন যে গৃহযুদ্ধ চলছে, সেটা শুরু হয়েছিল বাশার আল-আসাদের শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে জনগণ, বিশেষ করে দেশের বেকার তরুণদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ থেকে। তারুণ্যের সেই প্রতিবাদ দমাতে খড়গ হাতে তুলে নেন বাশার। এতে রাজপথে রক্ত ঝরে, অশান্তি ও সংঘাত ছড়ায় দেশজুড়ে। এরপর সিরিয়া সংকটে একে একে জড়িয়ে পড়ে আঞ্চলিক শক্তি থেকে বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলো।

বাশার ক্ষমতা নেওয়ার আগে থেকেই সিরিয়ার তরুণদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, দুর্নীতি, রাজনৈতিক ও বাক্‌স্বাধীনতার অভাববোধ থেকে তুমুল হতাশা ছিল, যা উসকে দেয় আরব বসন্ত।

২০১১ সালের মার্চে সিরিয়ার দক্ষিণের শহর দেরাতে প্রথম সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। তবে এর আগে দেশটির বিভিন্ন স্থানে ছোট ও বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভ হয়েছিল। বিক্ষোভ দমাতে সরকারি বাহিনীকে মাঠে নামান বাশার। দমন–পীড়নের মুখে বিক্ষোভকারীরা বাশারের পদত্যাগের দাবি তোলেন। এতে বেড়ে যায় দমন–পীড়ন। সেই সঙ্গে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো সিরিয়ায়।

একপর্যায়ে হাতে অস্ত্র তুলে নেন বাশারবিরোধীরা। তাদের ‘বিদেশি শক্তির মদদে পরিচালিত সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে বাশার সরকার। তবে, তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। সিরিয়াজুড়ে শতাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী তার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। একের পর এক এলাকা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। দেশটিতে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ।

টানা ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে সিরিয়ায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। উদ্বাস্তু হয়েছে দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ। ইতিহাসের সবচেয়ে করুণ মানবিক সংকট শুরু হয় এক সময়কার সমৃদ্ধশালী সিরিয়ায়। এত কিছুর পরও অটল ছিলেন বাশার আল আসাদ। দীর্ঘ এ লড়াইয়ে তার পাশে ছিল মিত্র ইরান ও রাশিয়া। লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গেও তার ছিল বেশ ঘনিষ্ঠতা। এতে পশ্চিমা শক্তিগুলোর চক্ষুশূলে পরিণত হন বাশার। বেসামরিক মানুষের নির্বিচার মৃত্যু, ২০১৪ সালের সাজানো নির্বাচন, বেসামরিক মানুষের ওপর রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিতর্ক ও সমালোচনা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বাশারকে।

সিরিয়ার একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক নিরাপত্তার স্বার্থে নাম গোপন রাখার শর্তে এএফপিকে বলেন, ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃঢ় মনোভাব ও সামরিক বাহিনীর অবিচল সমর্থন’ প্রেসিডেন্ট আসাদের কর্তৃত্ববাদী ভূমিকায় টিকে থাকার বড় শক্তি।

২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর আগে-পরে একজন সাংবাদিক বেশ কয়েকবার প্রেসিডেন্ট বাশারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এএফপিকে তিনি বলেন, বাশার একজন ব্যতিক্রমী ও জটিল চরিত্রের মানুষ।

নিজের নাম গোপন রাখার শর্তে বাশারের সঙ্গে দেখা করার অভিজ্ঞতা জানিয়ে ওই সাংবাদিক বলেন, ‘প্রতিবারই তাকে বেশ শান্ত দেখেছি। এমনকি যুদ্ধের চরম উত্তেজনার সময়ও বেশ শান্ত থাকেন। বাবার কাছ থেকে এ গুণ পেয়েছেন তিনি।’ আরটিভি