News update
  • State mourning begins, state funeral for Khaleda Zia at 2 pm     |     
  • Kamal Hossain: Khaleda Zia was ‘a patriot and democratic guardian'     |     
  • High medicine prices threaten healthcare of poor communities     |     
  • Curtain falls on a political giant as Khaleda Zia passes into history     |     

নেচারের শীর্ষ ১০ ব্যক্তির তালিকায় ড. ইউনূস

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2024-12-11, 7:48am

img_20241211_074541-4b396df7eac66cd1cc3a1c1c65d9bcfd1733881701.jpg




শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ২০২৪ সালের সেরা ১০ ব্যক্তিত্বের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানবিষয়ক খ্যাতনামা সাময়িকী নেচার। তালিকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরিচিতিতে লেখা হয়েছে, একজন অর্থনীতিবিদ ও নোবেল বিজয়ী হিসেবে যিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে একটি জাতিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ড. ইউনূসকে নিয়ে একটি বিশদ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে খ্যাতনামা সাময়িকী নেচার। এর সম্পাদকেরা শীর্ষ ১০ তালিকাটি তৈরি করেছেন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতাগুলোর ওপর আলোকপাত এবং গবেষক-চিন্তকেরা আমাদের বিশ্বকে কীভাবে রূপ দিচ্ছেন, তার স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে। এ বছরের অর্জনগুলোর মধ্যে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের নতুন পদ্ধতি থেকে একটি জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারের শীর্ষ ১০ ব্যক্তির তালিকায় রয়েছেন জার্মানির ন্যাশনাল মেট্রোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক পদার্থবিদ একেহার্ড পেইক। টাইম অ্যান্ড ফ্রিকোয়েন্সি বিভাগের প্রধান একেহার্ড পারমাণবিক শক্তি নিয়ে গবেষণা করছেন।

এই তালিকায় দশজনের মধ্যে থাকা কেইলিন খারাস একজন পিএইচডি গবেষক। কানাডার স্নাতকের শিক্ষার্থী ও পোস্টডক্টরাল গবেষকদের জন্য ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরকারি বরাদ্দ বাড়ানোর প্রচারণায় নেতৃত্ব দেন তিনি।

নেচারের তালিকায় সেরা দশে স্থান পাওয়া লি চুনলাই একজন ভূতত্ত্ববিদ। চাঁদের সবচেয়ে দূরবর্তী অংশ থেকে চীনের চাং’ই-৬ চন্দ্রাভিযানে সংগ্রহ করা পাথর গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

প্রতারণা শনাক্ত করে তালিকার শীর্ষ ১০ এ জায়গা করে নিয়েছেন আনা আবালকিনা। বৈজ্ঞানিক গবেষণা চুরি ও বেহাত হওয়া জার্নাল শনাক্তে অকুতোভয় এই নারী রাশিয়ার সরকারে রোষানলে পড়ার পর থেকে আনা জার্মানিতে থাকেন।

তালিকায় থাকা চিকিৎসক ও গবেষক হুজি সু চীনের সাংহাইয়ের নেভাল মেডিকেল ইউনিভার্সিটির একজন রিউম্যাটোলজিস্ট। ‘অটোইমিউন ডিজিজ’ চিকিৎসায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। এ অসুখে আক্রান্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সুস্থ অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করে।

নেচারের তালিকায় সেরা দশে স্থান পাওয়া কানাডার বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ওয়েন্ডি ফ্রিডম্যান একজন জ্যোতির্বিদ। মহাবিশ্ব কত দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে, এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে চলা কয়েক দশকের বিতর্ক তার গবেষণার মধ্য দিয়ে অবসান হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাকে ‘মহাজগতের রক্ষক’ (কসমিক রেঞ্জার) উপাধি দেওয়া হয়েছে।

নেচারের শীর্ষ তালিকায় থাকা প্লাসিড এমবালাকে বলা হচ্ছে ‘ভাইরাস শিকারি’ (ভাইরাস হান্টার)। তিনি কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিকেল রিসার্চের একজন মহামারিবিশেষজ্ঞ। চলতি বছরের শুরুর দিকে মধ্য আফ্রিকায় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল এমপক্স। তখন এই রোগ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করেছিলেন এমবালা ও তার দল।

তালিকায় থাকা সুইজারল্যান্ডের আইনজীবী কর্ডেলিয়া বারকে নেচার উপাধি দিয়েছে ‘জলবায়ু ক্রুসেডার’ (ক্লাইমেট ক্রুসেডার)। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে সুইজারল্যান্ড সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তিনি। ওই মামলায় তিনি দীর্ঘ আট বছর ধরে আইনি লড়াই চালিয়েছিলেন। পরে গত ৯ এপ্রিল ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস তার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন।

নেচারের শীর্ষ তালিকায় নাম থাকা রেমি ল্যামকে বলা হচ্ছে ‘আবহাওয়া নিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গোয়েন্দা’ (এআই ওয়েদার স্লিথ)। আবহাওয়ার পূর্বাভাস আরও নির্ভুল ও দ্রুত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছেন এই যুক্তরাষ্ট্রের এই গবেষক।

এই তালিকায় শীর্ষ দশে থাকা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘জাতির নির্মাতা’ হিসেবে উল্লেখ করে নেচার তার সম্পর্কে লিখেছে, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া প্রাণঘাতী বিক্ষোভে কর্তৃত্ববাদী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর বিপ্লবী ছাত্রসমাজের একমাত্র দাবি ছিল, ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তী নেতা হিসেবে নিয়ে আসা। তার কাঁধে দেশের শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের ভার। এ কাজ তার জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলেও মন্তব্য করেছে নেচার।

১৯৪০-এর দশকে ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় চট্টগ্রামে ড. ইউনূসের জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর চট্টগ্রাম পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। ১৯৬০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং পরিবেশগত অর্থনীতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নিকোলাস জর্জেসকু-রোগেনের অধীনে পড়াশোনা করেন। সে সময়ই তার মধ্যে অর্থনীতি ও প্রকৃতির মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ে স্পষ্ট বোঝাপড়ার সৃষ্টি হয়। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং নতুন রাষ্ট্র গঠনে অংশ নেন।

ড. ইউনূসের সবচেয়ে বেশি পরিচিতি রয়েছে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তার উদ্ভাবনী কাজের জন্য। ১৯৭০-এর দশকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থাকা অবস্থায় তিনি ক্ষুদ্রঋণের ধারণা পরীক্ষা করেন। স্বল্প পরিমাণ ঋণ নারীদের মধ্যে বিতরণ করে তিনি দেখান যে, এটি দরিদ্রদের জীবনমান উন্নয়নে কতটা কার্যকর হতে পারে। ছয় দশকের কর্মজীবনে তিনি দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য নতুন ধারণা পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। গবেষণার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সিস্টেম বুঝে সমস্যার সমাধান করা তার কাজের মূল ভিত্তি।

১৯৮৩ সালে তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক এখন বাংলাদেশ জুড়ে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপশি তার এই মডেল বিশ্বব্যাপী অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ সুদের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে শোষণ করে বলে সমালোচনাও রয়েছে। তবে ড. ইউনূস দেখিয়েছেন, যৌক্তিকভাবে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া হলে তা কীভাবে সমাজের সবচেয়ে দরিদ্রদেরও জীবন বদলে দিতে পারে। আরটিভি