
বিশ্বের বেশিরভাগ ক্রীড়া তারকার কাছে খ্যাতির মানদণ্ড হলো জার্সি বিক্রি, বিজ্ঞাপন চুক্তি বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারীর সংখ্যা। তারকারা এই খ্যাতি উপভোগও করেন। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম সেরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার রশিদ খানকে এই খ্যাতির ভার সামলাতে খরচ করতে হয় উচ্চমূল্য আর বাড়তি নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে। আফগানিস্তানের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে একজন শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটার হিসেবে বেঁচে থাকার কঠিন বাস্তবতার গল্প রশিদ জানিয়েছেন কেভিন পিটারসেনের সঙ্গে খোলামেলা সাক্ষাৎকারে।
আলাপের শুরুতে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক পিটারসেন রশিদকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কি কাবুলের রাস্তায় স্বচ্ছন্দে হাঁট্টে পারেন? উত্তরে রশিদ বলেন, ‘না’। এরপর তিনি যা জানান, তাতে পিটারসেন রীতিমতো হতবাক হয়ে যান।
পিটারসেনের সঙ্গে রশিদের সেই কথোপকথন ছিল নিম্নরূপ–
রশিদ খান: ‘আমি আফগানিস্তানে রাস্তায় হাঁটতে পারি না। আমার একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি আছে।’
কেভিন পিটারসন: ‘কাবুলে বুলেটপ্রুফ গাড়ি? কেন?‘
রশিদ খান: ‘নিরাপত্তার জন্য। আপনি ভুল জায়গায় ভুল সময়ে থাকতে চান না। আফগানিস্তানে এটা স্বাভাবিক। সবারই আছে।’
পিটারসেন অবাক হলেও রশিদের কাছে বুলেটপ্রুফ গাড়ি বিলাসিতা বা বা সামাজিক মর্যাদার প্রতীক নয়; বরং ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য একেবারে মৌলিক প্রয়োজন। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে, যেখানে অস্থিরতা এখনো নিত্যসঙ্গী, সেখানে নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকেই যায়।
এই কথোপকথনের সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো দিক ছিল রশিদের এই জোরালো দাবি যে এমন চরম নিরাপত্তা ব্যবস্থা আফগানিস্তানে ‘স্বাভাবিক‘। পিটারসনের অবিশ্বাস্য প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে রশিদের শান্ত স্বরই দেখিয়ে দেয়—সংঘাতপ্রবণ এক অঞ্চলে বসবাস করতে করতে তিনি এই বাস্তবতাকে কতটা মেনে নিয়েছেন।
রশিদ খান নিঃসন্দেহে আফগানিস্তানের সবচেয়ে পরিচিত মুখ, সবচেয়ে বড় সেলিব্রেটি বললেও ভুল হয় না। ফলে রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাওয়া অনেক গোষ্ঠীর কাছে তিনি একটি উচ্চমূল্যের লক্ষ্যবস্তু। আইপিএল, বিগ ব্যাশের মতো লিগে তার সাফল্য তাকে সম্পদের প্রতীক হিসেবেও উপস্থাপন করে, যা তাকে সর্বদা কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে থাকতে বাধ্য করে।
নিজ শহরে অবাধে হাঁটতে না পারা কিংবা সাঁজোয়া গাড়িতে চলাচল—সব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও রশিদ খান গর্বের সঙ্গে আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করে চলেছেন।