বাঁচা-মরার ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপে সুপার ফোরের আশা টিকিয়ে রাখলো বাংলাদেশ। পরদে পরদে উত্তেজনার ম্যাচে ১৯তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান জোড়া শিকার করে টাইগারদের জয় পাকাপোক্ত করেন। যদিও শেষদিকে তাসকিন আহমেদের ছন্নছাড়া বোলিং কিছুটা শঙ্কা তৈরি করেছিল।
আবুধাবিতে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) আফগানদের ৮ রানের ব্যবধানে হারাল লাল সবুজরা। ১৫৫ রান তাড়া করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে সব কটি উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রানে থামে রশিদের দল। ২৮ রান খরচায় টাইগারদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন মোস্তাফিজ। দারুণ বোলিংয়ে ১ মেডেনসহ মাত্র ১১ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন স্পিনার নাসুম আহমেদ।
‘বি’ গ্রুপে এদিন রোমাঞ্চকর এক ম্যাচ উপভোগ করলেন সমর্থকরা। ১৩ ওভার শেষে ৭৭ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট হারিয়েছিল আফগানিস্তান। তখনই জয়ের আবহ তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশের পক্ষে। তবে আজমতউল্লাহ ওমরজাই হঠাৎ বিধ্বংসী রূপ ধারণ করে ভীতি ছড়ান টাইগার শিবিরে। পার্ট টাইম বোলার সাইফ হাসানকে ১৪তম ওভারে পেয়ে ২ ছক্কা ও এক বাউন্ডারিতে ২০ রান তুলে নেন। পরের ওভারে কিছুটা মিতব্যয়ী বল করে টাইগারদের চাপ কমান রিশাদ। ১৬তম ওভারের তৃতীয় বলে তাসকিনকে ৯৯ মিটারের বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে আবার আতঙ্ক তৈরি করেন আজমতউল্লাহ। পরের বলে ফের তুলে মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সাইফের হাতে ক্যাচ দেন আজমতউল্লাহ। ১৬ বলে ৩ ছক্কা ও ১ চারে ৩০ রানে থামে তার ইনিংস। কিছুটা স্বস্তি পায় বাংলাদেশ।
কিন্তু রশিদ খান নেমে ফের ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করেন। তার ব্যাটে জয়ের আশা পাচ্ছিল আফগানিস্তান। শেষমেশ ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মোস্তাফিজের বলে স্লিপে তাসকিনকে ক্যাচ দিয়ে থামেন তিনি। ১১ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২০ রান করেন রশিদ। পরের বলেই এএম গজানফারের উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের জয় পাকাপোক্ত করে নেন মোস্তাফিজ।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২২ রান। হাতে ১ উইকেট। আফগানদের চাপে থাকার বদলে উল্টো তাসকিনকে তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেরেন নুর আহমেদ। তবে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেননি এ ব্যাটার। যদিও পঞ্চম বলে আরেকটি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন তিনি। শেষ বলে ফের সীমানার উপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে নুরুল হাসান সোহানের হাতে ধরা পড়েন। ৮ রানের জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা।
এদিন শুরুতে বল হাতে চমক দেখিয়েছিলেন স্পিনার নাসুম আহমেদ। মেইডেন দিয়ে প্রথম ওভারে তুলে নেন সেদিকউল্লাহ আতলের (০) উইকেট। পঞ্চম ওভারে ফের ইব্রাহিম জাদরানকে (৫) লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে চাপ তৈরি করেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও গুলবাদিন নাইব ম্যাচের হাল ধরেন। নবম ওভারে এসে তাদের ৩৩ রানের জুটি ভাঙেন রিশাদ। ১৪ বলে ১৬ রান করে টাইগার লেগ স্পিনারের বল পড়তে ভুল করে তাকেই ক্যাচ তুলে দেন গুলবাদিন। এক ওভার পর আক্রমণে এসে গুরবাজের উইকেটও তুলে নেন রিশাদ। ৩১ বলে ২ ছক্কা ও ২ চারে ৩৫ রানে থামেন গুরবাজ। এরপর মোহাম্মদ নবি ক্রিজ আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করলেও মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন। ১৫ বলে ১৫ রানে থামেন তিনি।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রানের সংগ্রহ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে ৬.৪ ওভারে ৬৩ রানের জুটির পরও শেষদিকে খুব একটা কার্যকরী ইনিংস খেলতে না পারায় সংগ্রহটা আরও বড় করতে পারেনি লাল সবুজরা। তানজিদ তামিম ৩১ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৫২ রান করেন। ২৮ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রান করেন আরেক ওপেনার সাইফ হাসান। এছাড়া ২০ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলে আউট হন তাওহীদ হৃদয়। বাকিদের মধ্যে বলার মতো ৬ বলে ১২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন নুরুল হাসান সোহান। আফগানদের পক্ষে ২৩ রান খরচায় নুর আহমেদ আর ২৬ রান খরচায় রশিদ খান ২টি করে উইকেট নেন।
‘বি’ গ্রুপে হংকংয়ের বিপক্ষে ৭ উইকেটের জয়ে এশিয়া কাপের মিশন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬ উইকেটের হারে শঙ্কায় পড়েছিল টাইগারদের সুপার ফোরের আশা। বাঁচা-মরার ম্যাচে আফগানদের হারিয়ে আশা জিইয়ে রাখল লাল সবুজরা।
২ ম্যাচে ২ জয়ে ‘বি’ গ্রুপ থেকে সুপার ফোরে এক পা দিয়ে রেখেছে শ্রীলঙ্কা। নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানদের হারাতে পারলে সুপার ফোরের টিকিট পাবে বাংলাদেশও। তবে আফগানিস্তান জিতে গেলে নেট রান রেটের মারপ্যাঁচে বাদ পড়তে পারে লিটনের দল। সেক্ষেত্রে তিন দলেরই পয়েন্ট হবে সমান ৪ করে। শ্রীলঙ্কার রান রেট ১.৫৪৬, আফগানদের ২.১৫০ আর বাংলাদেশের -০.২৭০।