
ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যাকে ঘিরে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) হোয়াইট হাউসে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন।
২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সাংবাদিক এবং সৌদি রাজপরিবারের কট্টর সমালোচক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর এটাই যুবরাজ সালমানের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, সাংবাদিক জামাল খাশোগির ২০১৮ সালের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ‘কিছুই জানতেন না’।
যদিও ট্রাম্পের এই বক্তব্য ২০২১ সালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা মূল্যায়নের বিপরীত। সেই সময় মার্কিন গোয়েন্দার প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল—ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে খাসোগিকে হত্যার অভিযানে যুবরাজের অনুমোদন ছিল।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও সাংবাদিক হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সৌদি আরব খাসোগি হত্যার তদন্তে ‘যথাযথ পদক্ষেপ’ নিয়েছে। তিনি ওই হত্যাকাণ্ডকে ‘বেদনাদায়ক’ বলেও উল্লেখ করেন।
মঙ্গলবার ওভাল অফিসে খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করায় ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি এমন একজনের কথা বলছেন যিনি ছিলেন অত্যন্ত বিতর্কিত। অনেকেই তাকে পছন্দ করতেন না। তাকে আপনি পছন্দ করুন বা না করুন-সবকিছু ঘটেই যায়।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘কিন্তু তিনি (ক্রাউন প্রিন্স) এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। আমাদের অতিথিকে বিব্রত করার প্রয়োজন নেই।
এদিকে ওভাল অফিসে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের শুরুতেই ট্রাম্প সৌদি আরবের প্রিন্সের প্রতি মার্কিন বাণিজ্যে বিনিয়োগ ৬০০ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে বন্ধুত্বের খাতিরে ১ ট্রিলিয়ন ডলার করার অনুরোধ করেন। সালমানও তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্পের এ প্রস্তাবে সম্মতি দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা–বাণিজ্যের সুযোগ বাড়ার সম্ভাবনায় দুই নেতা প্রকাশ্যেই সন্তুষ্টি জানান। এছাড়া রিয়াদের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করারও ঘোষণা দেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি শুধু বলতে চাই, আপনার বন্ধু হতে পেরে আমি কতটা সম্মানিতবোধ করছি। এক ট্রিলিয়ন ডলারের সেই বিনিয়োগের জন্য আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। আমি অনেক খুশি হয়েছি। এটি একটি দারুণ সংবাদ।’
বৈঠকে তেলের দাম কমে ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৬০ ডলারে নেমে আসার পরও সৌদি এই বিনিয়োগ বজায় রাখতে পারবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এমবিএস জানান, যুক্তরাষ্ট্রের এআই চিপ ও কম্পিউটিং শক্তির সঙ্গে সৌদি আরবের চাহিদা মিলিয়ে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
যুবরাজ বলেন, সৌদি আরবে কম্পিউটিং শক্তির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং আমাদের চাহিদা পূরণের জন্য স্বল্পমেয়াদে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার খরচ করব। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি হবে তা দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে শতাধিক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে। এটি সৌদি আরবের চাহিদার সঙ্গে খাপ খায় এবং বিনিয়োগ কৌশলের সঙ্গে মানানসই।
এ বৈঠকের পর দুই দেশের সম্পর্কের নতুন এক অধ্যায় শুরু হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন সালমান। এছাড়া সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জানান, ফিলিস্তিন ইস্যুতে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান হলেই কেবল রিয়াদ আব্রাহাম চুক্তির অংশ হবে। এছাড়া গাজার পুনর্নির্মাণে সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।
যদিও সাংবাদিকদের ট্রাম্প জানান, তিনি ইসরাইল–সৌদি আরবের স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং সৌদি যুবরাজের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক ছিল।