
বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড (সিভিএন-৭৮) ৩ অক্টোবর পালমা ডি ম্যালোর্কায় পৌঁছানোর পর পালমা উপসাগরে নোঙর করা হয়েছে। ছবি: এএফপি
ভেনেজুয়েলার প্রতি ক্রমবর্ধমান কঠোর অবস্থানের মধ্যে ল্যাটিন আমেরিকায় একটি বিমানবাহী রণতরী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপকে অঞ্চলটিতে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির বড়সড় বৃদ্ধি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক মুখপাত্র স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৪ অক্টােবর) জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড নামের বিমানবাহী রণতরী এবং এর সঙ্গে থাকা পাঁচটি ডেস্ট্রয়ারকে লাতিন আমেরিকায় পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। খবর আল জাজিরার।
পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল এক পোস্টে জানান, ‘ল্যাটিন আমেরিকায় বাড়তি মার্কিন সামরিক উপস্থিতি অবৈধ কার্যক্রম শনাক্ত ও প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও পশ্চিম গোলার্ধের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই সামরিক মোতায়েন ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত ‘মাদকবিরোধী অভিযানের’ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বরং এটি ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে উৎখাতের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বর্তমানে ওই অঞ্চলে মার্কিন নৌবাহিনীর আটটি যুদ্ধজাহাজে প্রায় ৬ হাজার সেনা সদস্য অবস্থান করছে। এবার জেরাল্ড ফোর্ড রণতরী ও আরও পাঁচটি ডেস্ট্রয়ার যুক্ত হবে, যার মাধ্যমে অতিরিক্ত সাড়ে চার হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হবে। রণতরীটি এখন ভূমধ্যসাগরে অবস্থান করছে, তবে কখন ল্যাটিন আমেরিকায় পৌঁছাবে তা স্পষ্ট নয়।
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তিনি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় অভিযান চালানোর অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি আরও ইঙ্গিত দেন, দেশটির ভেতরে সামরিক হামলা চালানো হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, মাদুরো সরকার অপরাধী চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক ও অভিবাসন সঙ্কট ‘ছড়িয়ে দিচ্ছে’। তবে জাতিসংঘ এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়নে এই দাবি প্রমাণিত হয়নি।
এর আগে সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলা-সংলগ্ন সাগরে একাধিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে, যেগুলোকে “মাদকবাহী” বলে দাবি করা হয়। তবে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে গণ্য হতে পারে।
ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদরিনো বলেন, “যেভাবেই ব্যাখ্যা করুন না কেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের কোনো পুতুল সরকার গঠনের সুযোগ দেবে না।”
পাদরিনো আরও যোগ করেন, “এটি আমাদের দেশের গত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক হুমকি। আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই।”
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো উত্তেজনা প্রশমনের কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, মাদুরোর পক্ষ থেকে দেওয়া সম্ভাব্য ছাড়ের প্রস্তাব তিনি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন না।