বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের তৈরি করা করোনাভাইরাসের টিকা বঙ্গভ্যাক্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেটেন্ট (মেধাস্বত্ব) পেয়েছে। বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো টিকা যুক্তরাষ্ট্রে পেটেন্ট পেল বলে গ্লোব বায়োটেকের পক্ষ থেকে রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।
তেজগাঁও শিল্প এলাকায় গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান কার্যালয়ে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গ্লোব বায়োটেক জানায়, করোনাভাইরাসের প্রকোপের সময় সারা বিশ্বের মানুষ যখন বিপর্যস্ত ছিল, তখন তাদের বিজ্ঞানী কাকন নাগ ও নাজনীন সুলতানার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ‘কোভিড-১৯' শনাক্তকরণ কিট, টিকা ও ওষুধ তৈরির জন্য গবেষণা শুরু হয়।
ওই গবেষণায় তৈরি হওয়া 'কোভিড-১৯ এমআরএনএ’ টিকা’ বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের (ডিজিডিএ) ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন পায়।
এই টিকার টার্গেটের সম্পূর্ণ কোডিং সিকোয়েন্স ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এনসিবিআই ডেটাবেজে প্রকাশিত হয়। পরে কোভিড-১৯–এর বিরুদ্ধে কার্যকর এক ডোজের এই এমআরএনএ টিকার গবেষণাপত্র যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেল জার্নাল এলসিডিয়ারের ভ্যাকসিনে এবং এই টিকা উৎপাদনের মৌলিক প্রযুক্তি যুক্তরাজ্যের নেচার জার্নালের সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে প্রকাশিত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ২০২০ সালে গ্লোব বায়োটেক তৈরি করা এই এমআরএনএ টিকা কোডিড-১৯ ভ্যাকসিন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
গ্লোবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বানরের ওপর ট্রায়ালে এই টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ ও কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি ছিল বানরের ওপর কোনো টিকার প্রথম ট্রায়াল।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গ্লোব বায়োটেক বলেছে, বঙ্গভ্যাক্স তাদের নিজস্ব উদ্ভাবিত মৌলিক প্রযুক্তির এমআরএনএ টিকা। এটি তৈরিতে ন্যানোটেকনোলজির মৌলিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি এক ডোজের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট–বিরোধী কার্যকরী কোভিড টিকা। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমআরএনএসহ অন্যান্য প্রযুক্তির টিকা তৈরি করা যাবে। এ ছাড়া এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের মত দুরারোগ্য রোগের আধুনিক ওষুধ তৈরি করা যাবে বলেও জানিয়েছে গ্লোব।
পেটেন্টের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে গ্লোব বায়োটেক বলেছে, এই পেটেন্ট অর্জন বাংলাদেশের চতুর্থ শিল্পবিপ্লবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যে টিকার ভূমিকা অপরিহার্য। পেটেন্টের এই মৌলিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে কার্যকরী ও নিরাপদ টিকা নিজ দেশেই কম খরচে উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে টিকা উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে সম্মান ও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এ ছাড়া ২০২৬ সালে এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টিকা আবিষ্কারের এই পেটেন্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।