আগামী সপ্তাহে রাশিয়ার সঙ্গে নতুন এক দফা শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আলোচনায় অগ্রগতি না থাকায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। খবর আল জাজিরার।
স্থানীয় সময় শনিবার (১৯ জুলাই) রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, “যুদ্ধবিরতির জন্য যা যা করা দরকার, তা করতে হবে। রাশিয়ার পক্ষ যেন সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে পালিয়ে না যায়।”
তিনি আরও বলেন, “সত্যিকারের শান্তি নিশ্চিত করতে শীর্ষ পর্যায়ে সরাসরি বৈঠক হওয়া জরুরি। আমি পুতিনের সঙ্গে সামনাসামনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত।”
জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের নতুন সচিব রুস্তেম উমেরভ আলোচনার প্রস্তাবটি রুশ প্রতিনিধিদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। উমেরভ গত সপ্তাহেই দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং আগের দুই দফা আলোচনায় তুরস্কে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
তবে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবের কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব আসেনি।
এর আগে অনুষ্ঠিত আলোচনাগুলোতে রাশিয়া যে কঠোর শর্ত রেখেছিল—যেমন চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চল রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়া ও পশ্চিমা সামরিক সহায়তা বর্জনের দাবি—তা ইউক্রেনের জন্য ছিল অগ্রহণযোগ্য।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা ভিন্ন সুরে কথা বলেছে মস্কো। শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, জেলেনস্কির “আরও গতি আনার” বক্তব্যের সঙ্গে মস্কো একমত।
এই অবস্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ বড় ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সপ্তাহে মস্কোকে ৫০ দিনের সময়সীমা দিয়েছেন যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে, নতুবা রাশিয়ার পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক ও রাশিয়ার তেল কেনা দেশগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ট্রাম্প আরও বলেছেন, তিনি ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহও বৃদ্ধি করবেন।
এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই হুমকি “চূড়ান্ত ব্ল্যাকমেইল” এবং এটি প্রমাণ করে যে ইউক্রেনকে শান্তি প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে।
নতুন আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে শনিবার ভোরে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ব্ল্যাক সি উপকূলবর্তী ওডেসা শহরে বড় আকারের ড্রোন হামলা চালায়, যাতে একজন নিহত এবং অন্তত ছয়জন আহত হন বলে জানান জেলেনস্কি।
জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, ওই রাতে রাশিয়া ৩০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৩০০টির বেশি ড্রোন নিক্ষেপ করে, যার প্রভাব পড়ে ইউক্রেনের ১০টি অঞ্চলে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার দক্ষিণ রোস্তভ অঞ্চলে চার ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে এবং এক রেলকর্মী আহত হন।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে তারা মোট ২৭টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে।
মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন জানান, তিনটি ড্রোন মস্কোর দিকে আসার সময় রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সেগুলো গুলি করে নামায়। নিরাপত্তাজনিত কারণে মস্কোর ভনুকোভো ও ডোমোদেদোভো বিমানবন্দরে সাময়িকভাবে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রাখা হয়।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর এটি ইউরোপের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে পরিণত হয়েছে। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ১২ লাখ মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে।
তবে নতুন আলোচনার প্রস্তাব, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চাপ এবং দুই পক্ষের বিবৃতিতে পরিবর্তন ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যত নিয়ে নতুন প্রশ্ন ও সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে।